বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং
মোবাইল ব্যাংকিং, মোবাইল দ্বারা ব্যাংকিং। আপনার হাতে থাকা মোবাইল ব্যবহার করে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ার ব্যাপারটাই হলো মোবাইল ব্যাংকিং।
খুবই সহজ কিছু কথায় একটা বিশাল বিষয় উপস্থাপন করলাম, এবার কিছু পরিসংখান দেখে নেয়া যাক আগে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনগনের ২০.৮০% মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলেছে বা কোনো ভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সাথে যুক্ত।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ১৫টি। যেগুলোর মধ্যে ৪টি (বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়) বেশ জনপ্রিয়।
জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্ল্যাটফর্ম গুলোর মধ্যে বর্তমানে বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে ৭ কোটিও বেশি। অন্যদিকে, নগদ এর নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটিরও বেশি। একই ভাবে রকেটের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩.৫ কোটি আর উপায় এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ।
বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১০ সালেই, সেসময় মোবাইল ব্যাংকিং করা হতো SMS এর মাধ্যমে। পরবর্তীতে সফটওয়্যার ভিত্তিক সিস্টেমে আসার পর ২০১১ সালে ৩১ শে মার্চ, প্রথমবারের মত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত “রকেট” তারপর থেকেই বিকাশ, নগদ, উপায়ের মত প্ল্যাটফর্ম গুলো দ্বারা সমৃদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানাবো দেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত ভাবে। থাকবে প্রধান ৪টি প্ল্যাটফর্ম সম্পরকে বিস্তারিত। আলোচনা করবো ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও। চলুন তবে শুরু করা যাক।
বিকাশ – দেশের #১ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস
বিকাশের ইতিহাস ও বৃদ্ধি
বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে বিকাশ। বিকাশের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে, যখন ব্র্যাক ব্যাংক ও মানি ইন মোশন নামক একটি কোম্পানির মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে, এর প্রকৃত কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে।
প্রথমদিকে, বিকাশের উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার আওতায় না আসা মানুষের জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী অর্থ স্থানান্তরের (Money Transfer) সুবিধা প্রদান করা।
বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী তখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল, যা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি বড় এক চ্যালেঞ্জ। বিকাশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, কেনাকাটার বিল পরিশোধসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করতে শুরু করে।
প্রথম থেকেই বিকাশ গ্রাহকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর প্রধান কারণ ছিলো বিকাশের সহজ ব্যবহার এবং দ্রুত সেবা প্রদান। যে কেউ সহজেই বিকাশের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে ও গ্রহণ করতে পারত। এছাড়াও, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানেও বিকাশ এজেন্টদের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে পেরেছে।
দ্রুত জনপ্রিয়তার ফলে বিকাশ খুব দ্রুতই বাংলাদেশের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেক্টরে শীর্ষ স্থান দখল করে। সময়ের সাথে সাথে বিকাশ তার সেবার পরিসর বাড়িয়ে আরো উন্নত ও বহুমুখী সেবা প্রদান করতে শুরু করে।
বর্তমানে বিকাশের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি, এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। বিকাশের এই সফলতা প্রমাণ করে যে, ডিজিটাল আর্থিক সেবা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এক নজরে বিকাশের পথচলা
সাল | কার্যক্রম |
---|---|
২০১১ | যাত্রা শুরু |
২০১২ | ২০+ লাখ গ্রাহক |
২০১৩ | ৫০ হাজার এজেন্ট পয়েন্ট ও ১ কোটি গ্রাহক |
২০১৪ | দ্যা গ্লোবাল ব্র্যান্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত |
২০১৫ | ২ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহক |
২০১৬ | বিশ্বের ১ নাম্বার ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস |
২০১৮ | বিকাশ অ্যাপ উদ্বোধন |
২০১৯ | বিকাশ নেক্সট অ্যাপ উদ্বোধন |
২০২২ | ৪র্থ বার |
২০২৩ | ৭ কোটি গ্রাহক |
বিকাশের প্রধান সেবাসমূহ
১) অর্থ স্থানান্তর: Bkash এর প্রধান সেবা হচ্ছে Money Transfer ব্যবস্থা। এখানে বিভিন্ন ভাবে টাকা স্থানান্তর করা যায়। প্রথমত, Send Money এর মাধ্যমে এক বিকাশ গ্রাহকরা এক একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবে। দ্বিতীয়ত্ব, ক্যাশ ইন / ক্যাশ আউট সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টাকা পাঠাতে পারবে। তৃতীয়ত, Add Money, Bkash to Bank এর মাধ্যমেও অর্থ স্থানান্তরের কার্যক্রমটি চালিয়ে যাওয়া যায় বিকাশের মাধ্যমে।
২) বিল পরিশোধ: যেকোনো ধরনের বিল (যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট, টেলিফোন, টিভি, ক্রেডিট কার্ড বিল কিংবা যেকোনো সরকারি ফি) মুহুর্তের মধ্যেই বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। পাশাপাশি ডিজিটাল রিসিটের মাধ্যমে উক্ত লেনদেনের সত্যতা যাচাই এর ব্যবস্থা তো থাকছেই।
৩) মোবাইল রিচার্জ: বাংলাদেশের সকল সিম কার্ডে রিচার্জ করা বিকাশের মাধ্যমে খুব সহজ। তাছাড়া রিচার্জের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যাশব্যাক বিষয়টিতে গ্রাহকের কাছে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। নিজ নাম্বার সহ যেকোনো নাম্বারেই বিকাশ থেকে রিচার্জ করা যায়।
৪) পেমেন্ট: সারাদেশ জুরে অনলাইনে যেকোনো পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিকাশ। তাছাড়া QR কোড স্ক্যানের মাধ্যমে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে কেনাকাটা করে পেমেন্ট করার সুবিধা তো থাকছেই। তাছাড়া বিকাশ পেমেন্টে থাকছে “পে লেটার” সুবিধা যার ফলে বাকিতে পণ্য ক্রয় করে ৭ দিন পরেও টাকা পরিশোধ করতে পারবেন এক্সট্রা চার্জ ছাড়াই।
অন্যান্য সেবা সমূহ
বিকাশের এমনই আরো অসংখ্য সেবা রয়েছে সেগুলো দ্বারা বিকাশ এখন নিত্য প্রতিটা পদে পদে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য সেবা গুলো হলোঃ
বিকাশ লোন: থাকছে বিকাশ থেকে লোন নেয়ার সুযোগ। সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা অব্দি ইন্সট্যান্ট লোন নিতে পারবে বিকাশ গ্রাহকরা (সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়)
রেমিটেন্স: বিদেশ থেকে রেমিটেন্স সরাসরি বিকাশে আনা যাবে, এবং সেটার ক্যাশআউট চার্জ হবে মাত্র ৭ টাকা (ATM বুথ থেকে তুলতে হবে)
মাইক্রোফাইন্যান্স: NGO কিংবা অন্যান্য মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের কিস্তি পরিশোধ করুন বিকাশের মাধ্যমে কোনো ঝামেলাছাড়াই সাথে পাবেন ডিজিটাল রিসিট।
এডুকেশনাল ফি: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেকোনো অনলাইন কোর্সের ফি জমা দিতে পারবেন বিকাশের দ্বারা সাথে পাবেন ডিজিটাল রিসিটও।
ইন্স্যুরেন্স: নিয়মমত নির্ধারিত সময়ে ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারবেন বিকাশ অ্যাপ থেকে।
ডোনেশন: সুবিধা-বঞ্চিত মানুষ, স্বাস্থ্য খাত, যাকাত ফান্ড গুলোতে বিকাশের মাধ্যমে ডোনেশন করতে পারবেন পছন্দের সংস্থাতে।
বিকাশ এজেন্ট নেটওয়ার্ক
বিকাশ এজেন্ট হলো তারাই যারা বিকাশের সেবা গুলো গ্রাহকদের কাছে সহজ ও নিরাপদ ভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে থাকে। এজেন্টদের মাধ্যমেই গ্রাহকরা বিকাশে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট করে থাকে সারাদেশ জুড়ে।
বর্তমানে বিকাশ এজেন্ট সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি। এবং বিকাশের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এজেন্ট সংখ্যাও বেড়ে চলছে। বিকাশের এজেন্ট হতে প্রাথমিকভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদন লিংক এটি।
বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমেই তাদের ৭ কোটি গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করে। একজন এজেন্ট হতে প্রাথমিক কোনো খরচ লাগে না, প্রয়োজন শুরু ট্রেড লাইসেন্স, স্মার্টফোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিকাশ সম্পর্কে ধারণা ও আবেদন করা। ব্যাস, এতেই আপনি বিকাশের এজেন্ট হওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন। জানুন সহজে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম।
বিকাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কর্তৃপক্ষের মতে, সম্পূর্ণ নিরাপদ আছে বিকাশ, আসলেই তাই। বিকাশের রয়েছে একাধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে। গ্রাহকের আস্থাই তাদের সফল্যের মূল চাবিকাঠি। এই সাফল্য ধরে রাখতে তাদের রয়েছে বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেগুলো হলো:
১. পিন (PIN) এর সুরক্ষা: বিকাশ অ্যাকাউন্টের প্রধান নিরাপত্তা ব্যবস্থা হলো পিন। প্রতিটি গ্রাহকের জন্য নির্ধারিত পাঁচ ডিজিটের পিন কোড তার লেনদেনকে সুরক্ষিত রাখে। পিন গোপন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি কখনোই অন্য কারো সাথে শেয়ার করা উচিত নয়।
২. ওটিপি (OTP) সিস্টেম: বিকাশ অ্যাকাউন্টে লগইন বা গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের সময় ওটিপি ব্যবহার করা হয়। এই ওটিপি একবারই ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য এবং দুই মিনিটের জন্য প্রযোজ্য থাকে। এটি নিশ্চিত করে যে, কেবলমাত্র অ্যাকাউন্টধারী নিজেই লেনদেনটি সম্পন্ন করছেন।
৩. বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন: বিকাশ গ্রাহকদের এডভান্স সুরক্ষা দিতে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সুবিধা প্রদান করছে। এতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে লগিন করার সুবিধা দেয়া হয়। এটি বিশেষ করে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং এর ঝুঁকি কমায়।
৪. ২৪/৭ মনিটরিং এবং ফ্রড ডিটেকশন: বিকাশের নিরাপত্তা টিম ২৪/৭ গ্রাহকদের লেনদেন মনিটর করে. পাশাপাশি সন্দেহজনক কার্যক্রম শনাক্ত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
অন্যদিকে, ফ্রড ডিটেকশন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেন বিশ্লেষণ করা হয় এবং কোনোরকম সন্দেহজনক কার্যক্রম পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
৫. সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ: বিকাশের প্রতিটি কর্মীকে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তারা যেকোনো সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে পারেন।
এছাড়াও, গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিকাশ নিয়মিত বিভিন্ন প্রচারণা চালায়। বিকাশে করনীয় ও বর্জনীয় কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে বিকাশ কতৃক নিরাপত্তা পরামর্শ গুলো দেখে নিতে পারেন।
বিকাশের সুবিধা ও অসুবিধা
বিকাশ নিয়ে এতক্ষণ যাবৎ যতটুকুই বলা হলো সেটা প্রতিষ্ঠানগত ব্যাপার, তবে একজন গ্রাহক হিসেবে কেনো বিকাশকে বেছে নেয়া হবে সেটা দেখার বিষয়। বিকাশ ব্যবহারের ফলে একজন গ্রাহকের কোন কোন বিষয়ে সুবিধা হচ্ছে আর কোন বিষয়ে অসুবিধা হচ্ছে সেটা এবার জানা উচিৎ, চলুন জেনে নেয়া যাক।
সুবিধা | অসুবিধা |
১) বিকাশ অ্যাপ ও QR কোডের মাধ্যমে লেনদেন অতিদ্রুত ও সহজে করা যায়। | ১) সার্ভিস চার্জ তুলনামূলক বেশি |
২) নিজ ও অন্যান্য নাম্বারে মোবাইল রিচার্জ করা খুব সহজ। | ২) পরপর ৩ বার পিন ভুল দিলে একাউন্ট লক হয়ে যায় |
৩) ইউজার ফ্রেইন্ডলি ইন্টারফেস ও কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে লেনদেন সিকিউর থাকে। | ৩) লেনদেন এর ক্ষেত্রে লিমিটেশন রয়েছে |
৪) লেনদেনগত যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ২৪/৭ এক্টিভ সাপোর্ট টিম রয়েছে। | ৪) যদিও বিকাশের নিরাপত্তা কঠোর তবে প্রতারক চক্র দ্বারা ফিশিং ও স্ক্যামিং এর শিকার হতে পারে। |
৫) বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে ক্যাশব্যাক সুবিধা |
বিকাশ নিয়ে আরও জানুনঃ
নিম্নোক্ত ব্লগপোস্টগুলি আপনার বিকাশ এক্সপেরিয়েন্স আরও সহজ করতে পারে।
- বিকাশ একাউন্টঃ জেনে নিন ঘরে বসে খুব সহজে কীভাবে নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়।
- বিকাশ ব্যালেন্সঃ দুইটি পদ্ধতিতে বিকাশে আপনার বর্তমান ব্যালেন্স দেখার নিয়ম জানুন।
- বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টঃ ব্যাবসায় সহজে লেনদেন ও এক্সট্রা সুবিধা পেতে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলুন। জানুন বিকাশে মার্চেন্ট একাউন্ট কীভাবে খোলে।
নগদ – ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন
নগদের উত্থান ও বাজার অধিগ্রহণ
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (MSF) এর প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে “নগদ” মেজর ভূমিকা পালন করেছে। Nagad বর্তমানে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও দ্রুত বর্ধনশীল এমএফএস প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক ১১ অক্টোবর ২০১৮ সালে Nagad এর ডিজিটাল আর্থিক সেবা চালু করা হলেও, অফিসিয়াল যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। প্রাথমিক পর্যায়ে নগদ একটি সঞ্চয়ী হিসাবের মত কাজ করতো, যেখানে গ্রাহকরা তাদের অর্থ জমা করার পাশাপাশি সহজে বিভিন্ন ভাবে লেনদেন করতে পারতো।
এরপর ২০২০ সালে, নগদ ইউনিসেফের সাথে অংশীদারিত্বে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য Money Transfer এর একটি উদ্যোগ শুরু করে, যা কি-না সামাজিক দায়িত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।
নগদের উত্থান
প্রতিষ্ঠানটি শুরুর ৪ বছরের মধ্যেই ৭ কোটি গ্রাহক অর্জন করতে সক্ষম হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নগদের মোট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি লোকদের ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্যে নিয়ে এসেছে নগদ-ই।
সাল | কার্যক্রম |
২০১৯ | যাত্রা শুরু |
জানুয়ারি, ২০২০ | ১ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহক |
আগস্ট, ২০২০ | ২ কোটি গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান |
জুন, ২০২১ | ৫ কোটি গ্রাহকের মাইনফলক |
ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ৬ কোটি গ্রাহকে পদার্পণ |
ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭ কোটি গ্রাহক |
২০২৪ (চলমান) | ৮ কোটি গ্রাহকের প্ল্যাটফর্ম |
নগদের উত্থান নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কিছু মূল বিষয় উঠে আসে যা তার সফলতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. প্রচারণা এবং বিপণন: নগদের সফলতার পিছনে তার কার্যকর প্রচারণা এবং বিপণন কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও এটি নিয়ে বেশ কিছু কন্টোভার্সি রয়েছে তবে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং, এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রচারণার মাধ্যমে তারা দ্রুত জনসাধারণের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
২. ব্যাপক নেটওয়ার্ক বিস্তার: বিকাশের মত নগদও তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছে দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে, যা তাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করেছে। এতে করে নগদের সেবা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
তাছাড়া কোটি মানুষের ভালোবাসায় Nagad সম্প্রতি “Most Emerging Brand of Bangladesh 2023” অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।
বাজার অধিগ্রহণে নগদের প্রভাব
নগদ তার কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই এমএফএস বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে নগদ প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন পরিচালনা করে, যা তাদের বাজারের বড় একটি অংশ দখল করতে সহায়ক হয়েছে।
নগদের বাজার অধিগ্রহণের আরেকটি প্রধান কারণ হলো সর্বনিম্ম সার্ভিস চার্জ। ক্যাশআউট চার্জের দিক থেকে নগদ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম চার্জ ধার্য করে। তাছাড়া নগদ তার গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেবা যেমন বিল পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, এবং রেমিট্যান্স গ্রহণের সুবিধা প্রদান করেছে যা তাদের গ্রাহকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ এমএফএস সেবা হিসেবে কার্যকরী হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে পরবর্তী ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
নগদের প্রধান সেবাসমূহ
নগদ প্রধান ৬টি সেবা নিশ্চিত করে। এগুলো হলো:
সেন্ড মানি: একজন নগদ গ্রাহক অন্য নগদ গ্রাহকের যেকোনো পরিমাণের অর্থ সেন্ড মানি করতে পারবে। এক্ষেত্রে সেন্ড মানি চার্জ ৫ টা। তবে অ্যাপ থেকে সেন্ড মানি করাতে সমপরিমাণের টাকা ক্যাশব্যাক দেয়া হয়।
ক্যাশ ইন: কাগজের টাকাকে নগদ একাউন্টে জমা করার প্রসেসকেই ক্যাশ ইন (Cash In) বলা হয়। নগদের এজেন্ট দ্বারা এই ক্যাশ ইন করা হয়। দেশের যেকোনো প্রাপ্ত থেকে ক্যাশ ইন করা যায় এজেন্ট থাকা সাপেক্ষে।
ক্যাশ আউট: Nagad একাউন্টের টাকা এজেন্টের মাধ্যমে কাগজ টাকায় রুপান্তর করাকেই ক্যাশআউট বলে। সারাদেশে যেকোনো এজেন্ট থেকেই ক্যাশআউট সেবা পাওয়া যায়।
মোবাইল রিচার্জ: নগদের মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ করা খুবই সহজ। নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি যে কোনো মোবাইল অপারেটরের নম্বরে অতিরিক্ত ফি ছাড়াই ইন্সট্যান্ট রিচার্জ করা যায়।
পে বিল: নগদের সেবার মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন ধরণের বিল পেমেন্টের সুবিধা। ইউজাররা তাদের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, এবং ইন্টারনেট বিলসহ বিভিন্ন ধরণের বিল নগদ অ্যাপ বা ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করে পরিশোধ করতে পারেন।
পেমেন্ট: দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে নগদের পেমেন্ট গেটওয়ে যুক্ত করা হয়েছে, যা গ্রাহকদের অনলাইন কেনাকাটা আরও সহজ এবং নিরাপদ করে তুলেছে।
নগদের অনন্য বৈশিষ্ট্য
- ১) নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম খুবই সহজ। মাত্র ৩টি ধাপে সম্পন্ন করা যায়। গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিজে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে।
- ২) স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য একটি বড় একটি সুবিধা হলো নগদের সার্ভিস চার্জ বিষয়ক। নগদের মাধ্যমে লেনদেনের ফি অন্যান্য MFS সেবার তুলনায় কম।
- ৩) নগদের একটি বিশাল এজেন্ট নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা দেশের প্রায় সকল অঞ্চল জুড়ে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নগদ তাদের গ্রাহকদের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারে এবং বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়। এর ফলে, নগদের সেবা শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকাতেও উপলব্ধ।
- ৪. নগদ তাদের গ্রাহকদের জন্য নিয়মিত নতুন নতুন সেবা চালু করে। যেমন কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্ট, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে নগদ পেমেন্ট গেটওয়ে, এবং সরকারি ভাতা সরাসরি মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাওয়ার সুবিধা।
- ৫.নগদ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বিতরণ। এই অংশীদারিত্ব নগদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে এবং দেশের জনগণের মধ্যে তাদের সেবার প্রতি আস্থা তৈরি করেছে।
নগদের ডিজিটাল সেবা
কিউআর কোড পেমেন্ট: নগদ তাদের গ্রাহকের জন্য কিউআর কোড পেমেন্টের সুবিধা নিয়ে এসেছে। এই সেবার মাধ্যমে গ্রাহকরা বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নগদ অ্যাপ ব্যবহার করে কিউআর কোড স্ক্যান করে সরাসরি পেমেন্ট করতে পারেন।
রেমিট্যান্স গ্রহণ: নগদের গ্রাহকরা সহজেই তাদের প্রিয়জনদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারেন। নগদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত, যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় সেবা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
সরকারি ভাতা বিতরণ: সরকারের বিভিন্ন ভাতা বিতরণ কর্মসূচির অংশীদার হিসেবে কাজ করে Nagad। যেমন: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি সরাসরি গ্রাহকদের নগদ অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এতে করে ভাতাভোগীদের টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হয়েছে।
অ্যাড মানি ফ্রম ব্যাংক / কার্ড: কোনো প্রকার চার্জ ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে যেকোনো ব্যাংক একাউন্ট / ভিসা কার্ড / মাস্টার কার্ড থেকে সরাসরি নগদে টাকা নিয়ে আসা যাবে। দৈনিক মোট ৫ বার সর্বোনিম্ম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা অব্দি Add Money করা যাবে।
মানি ট্রান্সফার: নগদ থেকে যেকোনো ভিসা কার্ডে Money Transfer করার সুযোগ দিচ্ছে নগদ। এক্ষেত্রে ভিসা কার্ডের ক্ষেত্রে কিছু চার্জ প্রযোজ্য। উক্ত কাজটি করতে নগদ অ্যাপ থেকে মানি ট্রানফার নামক অপশনটি ব্যবহার করতে হবে। এবং যেকোনো ব্যাংকের ভিসা কার্ডে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে।
EMI পেমেন্ট: Nagad এর মাধ্যমে নিদিষ্ট বিলারের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে EMI পেমেন্টের সার্ভিস চার্জসহ অন্যান্য চার্জ নির্ভর করবে বিলারের উপর। আপনার বিলার নগদের EMI পেমেন্ট গ্রহণ করে কি-না সেটা চেক করুন এখান থেকে।
ডোনেশন: নগদ অ্যাপ থেকে আপনি সর্বোমোট ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানে ডোনেশন করতে পারবেন। কোনো প্রকার চার্জ ছাড়াই আপনার ডোনেট করা সম্পূর্ণ অর্থ প্রতিষ্ঠান পাবে। এক্ষেত্রে আপনার নাম গোপন থাকবে তবে ফোন নাম্বার সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান অবগত থাকবে।
নগদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
Two-Factor Authentication: নগদ তার গ্রাহকদের প্রতিটি লেনদেনে দুই স্তরের ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াতে গ্রাহকদের তাদের পিন কোডের পাশাপাশি একটি ওটিপি (ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড) ব্যবহার করতে হয়, যা প্রতিটি লেনদেনের সময় গ্রাহকের নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে পাঠানো হয়। এই দুই স্তরের সুরক্ষা নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরাই লেনদেন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।
শক্তিশালী এনক্রিপশন প্রযুক্তি: নগদ গ্রাহকদের লেনদেন এবং ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রতিটি লেনদেন এবং তথ্য আদান-প্রদান একটি সুরক্ষিত চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা হ্যাকিং এবং অন্যান্য সাইবার হামলার ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
স্বয়ংক্রিয় লেনদেন নজরদারি: নগদ একটি স্বয়ংক্রিয় লেনদেন নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছে, যা প্রতিটি লেনদেনের কার্যকলাপ মনিটর করে। কোনো সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত হলে, তাৎক্ষণিকভাবে সতর্কতা জারি করা হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি জালিয়াতি এবং প্রতারণা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
গ্রাহককে সচেতন করার নিমিত্তে ব্যবস্থা: নগদ তার গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত প্রচারণা চালায়। নগদ অ্যাপ ব্যবহার করার সময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সতর্কবার্তা এবং নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়া, গ্রাহকদের পিন কোড এবং ওটিপি গোপন রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- নগদ পিন রিসেটঃ জানুন নগদ পিন ভুলে গেলে যেভাবে সহজে পিন রিসেট করা যায়।
নগদের সুবিধা ও অসুবিধা
নতুন যে Nagad একাউন্ট খুলতে চাচ্ছে তাদের নগদের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে অবগত থাকা উচিৎ। এতে করে তারা নগদ ব্যবহারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে। সে লক্ষ্যেই নিম্মে Nagad এর বেশ কিছু সুবিধা-অসুবিধা উপস্থাপন করছি।
সুবিধা | অসুবিধা |
১) সর্বনিম্ম ক্যাশ আউট চার্জ | ১) USSD-তে ১ টাকা সেন্ড মানি করলেও ৫টা চার্জ কাটে। |
২) সরকারি ভাতা সরাসরি একাউন্টে প্রাপ্তি | ২) গ্রাহকের তথ্য হ্যাকারের কাছে চলে যাওয়ার মত রেকর্ড পাওয়া গেছে। |
৩) ৩টি সহজ স্টেপে একাউন্ট খোলা যায় | ৩) জরুরি প্রয়োজনে লাইফ চ্যাট সাপোর্ট নেই। |
৪) রিচার্জ ও পেমেন্টে সব সময় ক্যাশব্যাক অফার থাকে। | ৪) একাউন্ট বন্ধ ও টাকা কেটে নেওয়ার মত এলিগেন্ট পাওয়া গেছে। |
নগদ সম্পর্কে আরও পড়ুনঃ
নিচের ব্লগপোস্টগুলি আপনার নগদ এক্সপেরিয়েন্স আরও সহজ করতে পারে…
- নগদ একাউন্টঃ জানুন সহজে কীভাবে নতুন নগদ একাউন্ট খোলা যায় খুলবেন।
- নগদ ব্যালেন্সঃ সহজ পদ্ধতিতে আপনার নগদ একাউন্টের বর্তমান ব্যালেন্স চেক করবেন কীভাবে তা জেনে নিন।
রকেট – দেশের প্রথম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম
রকেটের ইতিহাস ও বাজার অবস্থান
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে রকেটের যাত্রা শুরু হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উদ্যোগে ২০১১ সালে রকেট মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়। প্রথমদিকে, রকেট ছিল ‘ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে, ২০১৬ সালে, এটি নতুন ব্র্যান্ড নামে ‘রকেট’ হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবা সাধারণ জনগণের জন্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপ “রকেট” নিয়ে আসে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং নগদ লেনদেন কমিয়ে আনতে রকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের প্রায় ৬১০+ টি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয় রকেট হিসাবের মাধ্যমে।
দেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে রকেট। একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্যে, রকেট একটি নির্ভরযোগ্য এবং সুবিধাজনক সেবা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার তুলনায় রকেট তার সহজ ইন্টারফেস, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দ্রুতগতির সেবার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে উচ্চমানের সুনাম লাভ করেছে।
এছাড়া, রকেট বিভিন্ন প্রমোশনাল অফার এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা প্রদান করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে, যা তার বাজার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করেছে। গ্রাহক সংখ্যা এবং সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে রকেট আজ দেশের শীর্ষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সংখ্যার দিক থেকে রকেটের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩.৫ কোটি।
রকেটের প্রধান সেবাসমূহ
ক্যাশ ইন (Cash Deposit): রকেট এর গ্রাহকরা যেকোনো DBBL এর ব্র্যাঞ্চ কিংবা DBBL দ্বারা অনুমিত এজেন্টদের কাছ থেকে নগদ টাকা রকেটে একাউন্টে জমা করতে পারে।
ক্যাশ আউট (Cash Withdrawal): একইভাবে রকেট একাউন্টে থাকা অর্থ গ্রাহক চাইলে যেকোনো সময় DBBL এর যেকোনো ব্র্যাঞ্চে গিয়ে কিংবা ATM Booth এর মাধ্যমে কিংবা এজেন্টের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে। ক্যাশআউট চার্জ প্রযোজ্য।
মোবাইল রিচার্জ: Rocket এর গ্রাহকরা নিজেদের নাম্বারের পাশাপাশি যেকোনো অপারেটরের নাম্বারে মোবাইল রিচার্জ করতে পারবে। এক্ষেত্রে এক্সট্রা কোনো চার্জ প্রযোজ্য হবে না। Note: একমাত্র রকেট দ্বারাই সিটিসেল মোবাইলে রিচার্জ করতে পারবেন, এক্ষেত্রে Empty SMS পাঠাতে হবে 16216 নাম্বারে।
সেন্ড মানি (P2P): রকেট দ্বারা এক গ্রাহক অন্য গ্রাহককে টাকা পাঠাতে পারবে কোনো চার্জ ছাড়া সম্পূর্ণ ফ্রিতে। যেখানে অন্যান্য MFS সেন্ড মানিতে চার্জ কাটে সেখানে রকেট এইদিক থেকে এগিয়ে থাকবে।
ব্যাংক একাউন্ট থেকে রকেটে ট্রান্সফার (Bank to Rocket): গ্রাহকরা ব্যাংক একাউন্ট থেকে রকেটে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবে। এক্ষেত্রে চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রী।
রেমিটেন্স: পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন রকেটের মাধ্যমে। রেমিটারের রেমিটেন্স একাউন্টে পৌছে যাবে ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যেই। উক্ত বিষয়ে গ্রাহক সাথে সাথে SMS পাবে। এক্ষেত্রে exchange house-এ যেসব তথ্য দিতে হবে সেগুলো হলো: একাউন্ট নাম্বার, মোবাইল নাম্বার, বেনিফিসিয়ারির নাম ইত্যাদি।
বিল পরিশোধ: বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করা যাবে রকেটের মাধ্যমে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বিল গুলো রকেট দ্বারা খুব সহজেই করা যায়।
মার্চেন্ট পেমেন্ট: রকেটের গ্রাহক যদি কোনো কিছু ক্রয় করে থাকে এবং সেই প্রতিষ্ঠানটি রকেটের মার্চেন্ট হয়ে থাকে তবে উক্ত পেমেন্ট রকেটের মাধ্যমে করা যাবে। এক্ষেত্রে রকেটের মোবাইল অ্যাপ কিংবা *৩২২# ডায়াল করে করতে পারে।
রকেটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
রকেট – মোবাইল ব্যাংকিং সেবা কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা সমৃদ্ধ, যা গ্রাহকদের জন্য সেবাটি ব্যবহারকে আরও সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। নিচে রকেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
১. রকেটের ইন্টারফেস খুবই সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি।
২. রকেট গ্রাহকদের জন্য ২৪ ঘন্টা, সপ্তাহের সাত দিন সেবা প্রদান করে।
৩. রকেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর, এক্ষেত্রে প্রতিটি লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের পিন কোড প্রয়োজন হয়।
৪. বাংলাদেশজুড়ে রকেটের একটি ব্যাপক এজেন্ট নেটওয়ার্ক রয়েছে। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত রকেটের এজেন্ট পাওয়া যায়।
৫. রকেটের মাধ্যমে লেনদেন করা খুবই দ্রুত সম্পন্ন হয়। টাকা পাঠানো, গ্রহণ করা, বিল পরিশোধ বা ক্যাশ আউট সবকিছুই খুব কম সময়ের মধ্যে করা যায়।
রকেটের এজেন্ট নেটওয়ার্ক
রকেট এজেন্ট বলতে “রকেট” গ্রাহকদের সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত লোকদের বোঝানো হয়। এজেন্ট হওয়ার মাধ্যমে আপনি Rocket এর সাথে ব্যবসা করে আয় করতে পারবেন।
DBBL থেকে রকেটের এজেন্ট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে চাইলে বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সেগুলো হলো:
প্রথমেই আপনাকে নিকটস্থ DBBL এজেন্ট অফিসে চলে যেতে হবে। সেখানে বেশ কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করার মাধ্যমে Rocket এর এজেন্ট হওয়ার বিষয়টি জানাতে হবে। এরপর তারা আপনাকে নিবন্ধিত এজেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করবে। যে সকল ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন হবে সেগুলো হলো:
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- সদ্য তোলা ২ কপি ছবি
- চারিত্রিক সার্টিফিকেট
- ট্রেড লাইসেন্স
- নমিনির ছবি ও NID কার্ড
- পূর্বে কোনো Rocket একাউন্ট খোলা হয়নি এমন মোবাইল নাম্বার।
রকেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গ্রাহকের নিরাপত্তার জন্য রকেট বেশ কিছু সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো:
১) মোবাইল নাম্বার ব্যতীত এডিশনাল একাউন্ট নাম্বার যার দ্বারা লেনদেনের ক্ষেত্রে একাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে।
২) PIN এর পাশাপাশি প্রতি ট্রানজেকশনের পূর্বে OTP প্রদানের মাধ্যমে এক্সট্রা নিরাপত্তা প্রদান করা হয়।
৩) যেহেতু রকেট DBBL ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাই রকেট থেকে লেনদেন করাতে ব্যাংকের ন্যায় সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
রকেটের সুবিধা ও অসুবিধা
রকেট একাউন্ট খোলার আগে অবশ্যই রকেট একাউন্টের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিৎ, এতে করে গ্রাহক কি পাচ্ছে আর কি পাচ্ছে না সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে লেনদেন করতে পারবে। নিম্মে তা উপস্থাপন করা হলো:
সুবিধা | অসুবিধা |
১) রিয়েল টাইম ব্যাংকিং সেবা। যখন তখন যেখানে থেকে ইচ্ছা ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করার সুযোগ | ১) ক্যাশআউট চার্জ তুলনামূলক বেশি। |
২) কম খরচে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন করা যায়। | ২) অফার ও ক্যাশব্যাকের দিক থেকে অন্য MFS গুলো থেকে পিছিয়ে |
৩) কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাকা ট্রান্সফার করার সুবিধা। | ৩) ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনের ক্ষেত্রে Live Chat সুবিধা নেই। |
৪) দেশের অনেক সরকারি – বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন রকেটের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। | ৪) অনলাইনে অনেক স্থানে বিকাশ, নগদের গেটওয়ে থাকলেও রকেটের নেই। |
৫) ATM বুথ থেকে টাকা ক্যাশআউট করা যায়। |
রকেট সম্পর্কে আরও জানুনঃ
নিম্নোক্ত ব্লগপোস্টগুলি আপনার রকেট ইউজ এক্সপেরিয়েন্স আরও সহজ করতে পারে।
- রকেট একাউন্টঃ সবচেয়ে সহজ উপায়ে নতুন রকেট একাউন্ট খোলার নিয়ম জানুন।
- রকেট ব্যালেন্সঃ ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর রকেট ব্যালেন্স জানার সহজ পদ্ধতিগুলো পড়ুন।
উপায় – সহজ ও নিরাপদ
উপায়ের পরিচয় ও বাজারে অবস্থান
Upay একটি বাংলাদেশি MFS বা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, যা বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB) এর একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। ২০২১ সালে এটি বাজারে আত্মপ্রকাশ করে, এবং এর লক্ষ্য হলো দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার বাজারে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করা।
বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বাজারে বেশ প্রতিযোগিতা রয়েছে, যেখানে বিকাশ, নগদ, এবং রকেটের মতো প্রতিষ্ঠিত সেবাগুলি দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে অবস্থান করছে।
“উপায়” সেবাটি বাজারে নতুন হলেও, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শক্তিশালী ব্যাকিং এবং উন্নত প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানের মাধ্যমে এটি দ্রুত বাজারে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে উপায়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে।
উপায়ের প্রধান সেবাসমূহ
Upay (উপায়) বেশ কিছু সার্ভিস তাদের গ্রাহকদের জন্য দিয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু উপস্থাপন করছি:
সেন্ড মানি: এক উপায় একাউন্ট থেকে অন্য উপায় একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করাই হলো সেন্ড মানি। উপায়ে সেন্ড মানি চার্জ ফ্রী।
ক্যাশ ইন: নিকটবর্তী যেকোনো এজেন্টের কাছ থেকে উপায় একাউন্টে টাকা ক্যাশ ইন করতে পারবেন খুব সহজে। ক্যাশ ইন করতে কোনো খরচ দিয়ে হয়না।
ক্যাশ আউট: উপায় একাউন্টে থাকা টাকা যেকোনো সময় এটিএম এবং এজেন্টের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
মোবাইল রিচার্জ: ব্যালেন্স রিচার্জ, ইন্টারনেট প্যাক, মিনিট কিংবা বান্ডেল প্যাক প্রিপেইড হোক বা পোস্টপেইড সব ধরণের মোবাইল রিচার্জ করতে পারবেন উপায়ের মাধ্যমে।
পেমেন্ট: ফিজিক্যাল কিংবা অনলাইন শপ, কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ক্যাশলেস পেমেন্ট করুন উপায়ের মাধ্যমে।
বিল পে: যেকোনো বিল পরিশোধের কাজ খুব সহজ হয়ে উপায়ের সাথে। কোনো ধরণের চার্জ ব্যতীত গ্যাস, ক্রেডিট কার্ড, ইলেক্ট্রিসিটি, পানি, ইন্টারনেট ও ক্যাবলের বিল পরিশোধ করতে পারবেন।
অ্যাড মানি: Upay একাউন্টে টাকা আনার ৪টি অপশন রয়েছে। এক্ষেত্রে UCB একাউন্ট / কার্ড / ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।
রিকুয়েস্ট মানি: Upay একাউন্টে টাকা না থাকলে এজেন্ট কিংবা মার্চেন্ট এর কাছে ছুটতে হবে না, অন্য কোনো উপায় গ্রাহকের কাছে রিকুয়েস্ট মানি করা যাবে, উক্ত গ্রাহক এক্সেপ্ট করলে আপনার একাউন্টে টাকা চলে আসবে।
ফান্ড ট্রান্সফার: Upay থেকে যেকোনো ব্যাংকে কিংবা ভিসা কার্ডে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন খুব সহজে। ছুটির দিনে যখন ব্যাংক বন্ধ থাকে তখনও।
রেমিটেন্স: প্রবাসী বাংলাদেশী যাদের আমরা রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে চিনি তারা তাদের অর্জিত অর্থ রেমিটেন্স আকারে দেশে পাঠাতে পারবে উপায়ের মাধ্যমে।
ডোনেশন: আপনি যদি কোনো সংস্থাকে ডোনেশন পৌছে দিতে চান তবে সেটা উপায় থেকেই করতে পারবেন।
পেওনিয়র: বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা পেওনিয়র একাউন্টের সাথে উপায় অ্যাপকে লিংক করিয়ে সরাসরি টাকা নিয়ে আসতে পারবে কোনো ব্যাংকে যাওয়া ছাড়াই।
প্রিপেইড কার্ড: ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের সাথে Collaboration এর মাধ্যেম নিজস্ব প্রিপেইড কার্ড সেবা প্রদান করে। গ্রাহকরা ব্যাংক সহজেই কার্ডটি নিতে পারবে।
উপায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য
বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে উপায় অ্যাকাউন্ট অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস গুলো থেকে কিছুটা ভিন্ন। উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্ন উপস্থাপন করা হলো:
১) উপায় একাউন্টে সেন্ড মানি চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রি
২) উপায় একাউন্ট ব্যবহার করেই ব্যাংকের প্রিপেইড কার্ড পাওয়া যায়
৩) পেওনিয়রের সাথে পার্টনারশিপ করাতে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য উপকারী
৪) একমাত্র উপায়ই দিচ্ছে বিলাসবহুল লাউঞ্জ সুবিধা
৫) ইউজার ফ্রেইন্ডলির পাশাপাশি খুবই সিকিউরড উপায়।
উপায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
Upay তাদের সুরক্ষিত সিস্টেম, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, এবং প্রক্রিয়া অভিযোজন নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য সার্ভিস প্রদান করে। Two Step Verification ও PIN এর মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেন হয় নিরাপদ। উপায় প্রচলিত ডাটাবেস সিস্টেম এবং এনক্রিপশন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা।
উপায়ের সুবিধা ও অসুবিধা
এতো গুলো মোবাইল MFS থাকতে উপায় কেনো ব্যবহার করবেন? এবং এটা ব্যবহারের ফলে আপনার কি অসুবিধা হতে পারে সে বিষয়ে জানা জরুরি। এই পর্যায়ে সেটা নিয়েই জানাবো।
সুবিধা | অসুবিধা |
১) ATM বুথ থেকে টাকা উত্তোলনে হাজারে মাত্র ৮টা ক্যাশ আউট চার্জ হবে। | ১) ইউজার সংখ্যা অন্যান্য MFC থেকে কম |
২) একমাত্র উপায় থেকেই ট্রাফিক ফাইন দেয়া যায়। | ২) এজেন্ট পয়েন্ট ও ATM বুথের সংখ্যাও কম |
৩) ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন ফি দেয়া যায় উপায় থেকে। | ৩) Live Chat এর সুযোগ নেই |
৪) ব্যাংক একাউন্ট ছাড়াই প্রিপেইড কার্ড পাওয়া যায় | ৪) ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে তুলনামূলক কম। |
৫) পেওনিয়র থেকে সরাসরি টাকা নিয়ে আসা যায়। |
এক নজরে সকল মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস
সেবাসমূহঃ সেন্ড মানি, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট, বিল পে, অ্যাড মানি, বিকাশ টু ব্যাংক, রেমিটেন্স, ডোনেশন, ইন্স্যুরেন্স, এডুকেশনাল ফি, মাইক্রোফাইন্যান্স, বিকাশ লোন।
চার্জঃ সেন্ড মানি চার্জ: ৫ প্রিয় নাম্বারে ফ্রী, এবং ২৫,০০০ টাকার উর্ধে ৫ টাকা। ক্যাশ আউট চার্জ: প্রিয় এজেন্ট নাম্বারে হাজারে ১৪.৯০৳; রেগুলার ১৮.৫০৳; ATM বুথে ১৪.৯০ টাকা।
নিরাপত্তাঃ Two Step Verification, PIN, Fingerprint. OTP.
উপযুক্ততাঃ ব্যবহারে সহজ, নিরাপদ, সকল স্থানে প্রাপ্ততাসহ সকল স্তরের সকল ব্যক্তির জন্য।
সেবাসমূহঃ সেন্ড মানি, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট, বিল পে, ডোনেশন, EMI পেমেন্ট, মানি ট্রান্সফার, অ্যাড মানি ফ্রম ব্যাংক / কার্ড, সরকারি ভাতা বিতরণ।
চার্জঃ সেন্ড মানি চার্জ: ৫ টাকা (পরবর্তীতে ক্যাশ ব্যাক ৫ টাকা দেয়া হয়)। ক্যাশ আউট চার্জ: অ্যাপ থেকে ১১.৪৯৳; USSD থেকে ১৪.৯৪ টাকা।
নিরাপত্তাঃ OTP, PIN.
উপযুক্ততাঃ সরকারি ভাতা ভোগী ও ক্যাশআউট চার্জ কম খোজে থাকা ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত।
সেবাসমূহঃ সেন্ড মানি, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট, বিল পে, ব্যাংক একাউন্ট থেকে রকেটে ট্রান্সফার, রেমিটেন্স, মার্চেন্ট পেমেন্ট।
চার্জঃ সেন্ড মানি চার্জ: ফ্রী। ক্যাশ আউট চার্জ: এজেন্ট থেকে হাজারে ১৬.৭০৳ ও ATM থেকে ৯ টাকা।
নিরাপত্তাঃ OTP, PIN.
উপযুক্ততাঃ কোম্পানি স্যালারি একাউন্টধারীদের জন্য উপযুক্ত, পাশাপাশি DBBL এর সাথে যুক্ত সকলের।
সেবাসমূহঃ সেন্ড মানি, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট, বিল পে, অ্যাড মানি, রিকুয়েস্ট মানি, ফান্ড ট্রান্সফার, রেমিটেন্স, ডোনেশন, পেওনিয়র, প্রিপেইড কার্ড।
চার্জঃ সেন্ড মানি চার্জ: ফ্রী। ক্যাশ আউট চার্জ: এজেন্ট থেকে ১৪৳ এবং ATM বুথ থেকে ৮ টাকা।
নিরাপত্তাঃ OTP, PIN.
উপযুক্ততাঃ ফ্রিল্যান্সার, প্রিপেইড কার্ড নিতে ইচ্ছুক ও সবচেয়ে কম চার্জে টাকা উত্তোলনকারীদের জন্য উপযুক্ত।
মোবাইল ব্যাংকিং এর ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলই বলা চলে। ব্যাংকিং সেবার ডিজিটালাইজেশন, ইন্টারনেটের প্রসার এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি এই খাতের সম্ভাবনাকে আরও সুদূরপ্রসারী করে তুলেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক।
বাংলাদেশে মোবাইল ওয়ালেটের সম্ভাবনা
মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে এখন সহজেই লেনদেন, বিল প্রদান, অনলাইন শপিং এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী এবং ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা মানুষের সংখ্যা বিবেচনা করলে মোবাইল ওয়ালেটের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ওয়ালেটকে উৎসাহিত করছে।
নতুন সেবা ও প্রযুক্তি
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন সেবা ও প্রযুক্তির সংযোজন দ্রুতগতিতে হচ্ছে। যেমন: ই-কমার্স, ডিজিটাল ঋণ সুবিধা, মোবাইল ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি। এছাড়া ব্লকচেইন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং বিগ ডাটা এনালিটিক্সের ব্যবহার মোবাইল ব্যাংকিংকে আরও উন্নত ও সুরক্ষিত করছে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা সহজ ও ইউজার ফ্রেইন্ডলি হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দ্রুত উন্নতির সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও যুক্ত হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা, এবং জালিয়াতির ঝুঁকি এই খাতে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, এই চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিকাশ আরও ত্বরান্বিত হবে।
অন্যদিকে, দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের প্রসার, সরকারের ডিজিটালাইজেশন উদ্যোগ, এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির চাহিদা মোবাইল ব্যাংকিংকে বড় সুযোগ করে দিচ্ছে। আগামীতে এই খাতে আরও নতুন সেবা ও প্রযুক্তির সংযোজন আশা করা যায়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করবে।
নিরাপত্তা সচেতনতা
মোবাইল ওয়ালেট এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে সহজেই অর্থ লেনদেন, বিল পরিশোধ এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করা যায়। তবে, এর ব্যবহারের সময় সতর্ক না থাকলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বনে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন:
১) কখনোই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন পিন কোড বা পাসওয়ার্ড, অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
২) মেসেজ বা ইমেইলে অজানা লিংকে ক্লিক করবেন না।
৩) নিয়মিতভাবে আপনার মোবাইল ওয়ালেট অ্যাপ আপডেট করুন।
৪) পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকুন।
তাছাড়া ফ্রড প্রতিরোধ করতে কিছু প্রতিরোধের উপায় অবলম্বন করতে পারেন যেমন: Two-factor authentication, সন্দেহজনক বা অপরিচিত অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।
অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার টিপস
প্রতিটি মোবাইল ওয়ালেট সেবার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে চলা উচিত। বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় এর ক্ষেত্রে PIN (Personal Identity Number), OTP, Fingerprint, Default Two step verification মেথড গুলোর ব্যবহার করবেন। আর সবচেয়ে বড় নির্দেশনা যা প্রতিটা MFS দিয়ে থাকে তা হলো “কখনই নিজের PIN কারো সাথে শেয়ার করবেন না”।
চুড়ান্ত মন্তব্য
বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে আর্টিকেলটির মাধ্যমে। উল্লেখ্য যে, দেশে প্রায় ১৫টির মত MFS থাকলেও ৪টি প্রধান ভুমিকা পালন করে। আর এই আর্টিকেলে সেই ৪টি প্ল্যাটফর্ম (বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়) সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইনফোনুর এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।