ভোটার আইডি কার্ড আবেদন
প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করে থাকে। একটি দেশের নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় হওয়ার পর এটা করা বাধ্যতামূলক। তাই এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে গাইড করবো যাতে করে গুরুত্বপূর্ণ এই ডকুমেন্টসটি প্রস্তুত করতে আপনার কোনো প্রকার ঝামেলা না হয়।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড আবেদন সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ১৬ বছর বয়স রয়ে গেলেই ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে ১৮ বছরের আগে ভোট দিতে পারবে না। সেই হিসেবে আপনার যদি ১৬ বছর হয়ে থাকে কিংবা আপনি যার আবেদন করাতে চাচ্ছেন তার যদি ১৬ বছর হয়ে থাকে তাহলেই আপনি ভোটার আইডি কার্ড আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রমে অগ্রসর হতে পারেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করাটা খুব জটিল কিছু না, সাধারণ কিছু নিয়মের অনুসরণের মাধ্যমেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমে নিদিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করতে হবে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস সহকারে।
অতঃপর, আবেদনপত্র ও ডকুমেন্টস গুলো নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। তারা আবেদনটি যাচাই করবে এবং উপযুক্ত সময়ে আপনার ছবি ও ফিংগার প্রিন্টের জন্য ডাকা হবে।
বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই আবেদন কার্য সম্পন্ন হবে এবং আপনি অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন। অন্যদিকে হার্ড কপির জন্য নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। অল্পের মধ্যে এই হলো পুরো প্রক্রিয়াটি, এবার আসুন একেক করে জেনে নেই গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য গুলো বিস্তারিতভাবে।
ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করতে কি কি লাগে?
যখনই প্রশ্ন উঠে একজন নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদনের কথা, তখনই নিম্ম উল্লেখ্যিত ডকুমেন্টস গুলো আপনার থাকা চাই।
- অনলাইনে থাকা জন্ম সনদ (বাংলা ও ইংরেজি)
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট (SSC, HSC) [যদি থাকে]
- বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র
- বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন সনদ/জাতীয় পরিচয়পত্র
- নাগরিকত্বের সনদ
- ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি) এর কপি
- চৌকিদারী ট্যাক্সের সনদ
- রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার সনদ (সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত)
- চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র
ব্যাস, এই ডকুমেন্টস গুলো আপনার কাছে থাকলেই আপনি নতুন ভোটার হিসেবে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড আবেদন ফরম
ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আবেদন ফরম পূরণ করে সেটা নিদিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে কাজটি দুইটি ভাবে করা যায়।
১) অনলাইনে আবেদন
২) আবেদন ফরম হাতে পূরণ করে আবেদন
উভয় পদ্ধতিই কার্যকর। তবে যদি হাতে লিখে আবেদন করতে হয় তাহলে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন ফরম প্রিন্ট আউট করে নিতে হবে। এই ফরমটি কেমন হবে সেটার ডেমো নিচের ছবির মাধ্যমে দেখিয়ে দিচ্ছি।
পাশাপাশি আপনি যদি অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে চান সেক্ষেত্রে এই লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করার নিয়ম
এবার জানাবো যদি অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করতে চান সেক্ষেত্রে কখন, কোথায়, কিভাবে কি করবেন সে বিষয়ে। অনলাইনে আবেদন করার একটা সুবিধা হলো প্রসেসিং টাইম কম লাগে, দ্রুত আইডি কার্ড পাওয়া যায়।
১ম ধাপ: আবেদন প্রক্রিয়া শুরু ও একাউন্ট খোলা
আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রথমেই যেকোনো ব্রাউজার থেকে এই লিংকে [https://www.nidw.gov.bd] চলে যান। এটা নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।
নিচের ছবিতে প্রদর্শিত পেজটি হলো Home পেজের এখান থেকে হাতের বাম পাশের মেনু অপশন গুলো থেকে NID Online Service ক্লিক করলে আবেদন পেজে নিয়ে যাবে।
নতুন একটি পেজে প্রদর্শিত হলে, দুইটা অপশন পাবেন।
১) একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
২) নতুন আবেদন করুন
যেহেতু নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করা হবে তাই ২য় অপশনটি ক্লিক করুন।
তারপর একটি নতুন পেজে নিয়ে আসবে। এবার একটি একাউন্ট খুলতে হবে। আপনার নাম, জন্ম তারিখ ও ক্যাপচা পূরণ করে একাউন্ট খুলতে হবে। অবশ্যই এখানে সেই নামটি দিবেন যে নামের কার্ড করতে চাচ্ছেন।
সবশেষে বহাল নামক অপশনটি ক্লিক করুন।
এবার আরেকটি নতুন পেজে নিয়ে আসবে, এখানে একটি মোবাইল নাম্বার সাবমিট করতে হবে এবং নাম্বারটি যাচাই করে নিতে ৬ সংখ্যার OTP নাম্বারে পাঠানো হবে সেটা সাবমিট করতে হবে। কাজটি হয়ে গেলে “বহাল” নামক অপশনে ক্লিক করুন।
যে একাউন্টটি খুলতে চাচ্ছেন সেটার জন্য একটি Username এবং password দিন। পাসওয়ার্ড অবশ্যই অক্ষর, সংখ্যা ও স্যাম্বল চিহ্ন দিয়ে মিক্স করে তৈরি করবেন। এরপর “বহাল” অপশনে ক্লিক করুন।
২য় ধাপ: আবেদনাধীন ব্যক্তির তথ্য প্রদান করুন
এই পর্যায়ে একাউন্টের ড্যাশবোর্ডে চলে আসবেন। এখন একাউন্টে বিস্তারিত তথ্য যেমন ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানাসহ আরো অন্যান্য তথ্য প্রদান করে আবেদন করতে হবে। নিচের দেয়া ছবি অনুসরণ করুন এবং প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করে তথ্য দেয়া শুরু করুন।
এখানে মোট ৩ স্তরে তথ্য দিতে হবে। প্রথমে ব্যক্তিগত তথ্য, এরপর অন্যান্য, সবশেষে ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য। শুরু করা যাক ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য অপশনটি সিলেক্ট করে এডিট অপশনে ক্লিক করুন।
ব্যক্তিগত তথ্যের ঘরে আপনার নাম, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন, জন্মস্থান ইত্যাদি Automatic ভাবে Fillup হয়ে যাবে, যদি কোনো কারণে না হয় তবে Add করে দিবেন। নেক্সট পিতা-মাতার তথ্য দিতে হবে। পিতা-মাতার ব্যক্তিগত তথ্য সেকশনে যেসব তথ্য দিতে হবে সেগুলো হলো:
- পিতার নাম বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়
- পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার
- ভোটার নাম্বার (যদি প্রয়োজন হয়)
- পিতা যদি মৃত হয় তবে মৃত্যু সন
একই ভাবে মাতার বিষয়ক তথ্য দিতে হবে, যেমন:
- মাতার নাম বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়
- মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার
- ভোটার নাম্বার (যদি প্রয়োজন হয়)
- মৃত্যুর সনদ (মাতা মৃত হলে)
তাছাড়া বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে। যদি বৈবাহিক অবস্থা বিবাহিত হয় তবে স্বামী/স্ত্রীর নাম অবশ্যই উল্লেখ্য করতে হবে।
এই পর্যায়ে “অন্যান্য” নামক অপশনে ক্লিক করলে আরো কিছু তথ্য দিতে হবে। সেগুলো হলো:
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশা
- ধর্ম
- অসমর্থতা (প্রযোজ্য হলে)
- সনাক্তকরণ চিহ্ন (যদি থাকে)
- টিন নাম্বার (ঐচ্ছুক)
- ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)
- পাসপোর্ট (যদি থাকে)
সকল তথ্য যথাযথ ভাবে পূরণ করা হলে সবশেষে মোবাইল নাম্বার সাবমিট করুন এবং তথ্য দেয়া বহাল রাখুন।
৩য় ধাপ: যোগাযোগের ঠিকানার তথ্য
ব্যক্তিগত তথ্য গুলো দেয়ার পর বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে। প্রথমেই অবস্থানরত দেশ (বাংলাদেশ) সিলেক্ট করে ফেলুন। দেশের বাইরের হলে সে উক্ত দেশের নাম সিলেক্ট করে দিন। এরপর যদি আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হয় তবে যে স্থানের ভোটার হতে চাচ্ছেন সেই স্থানটি সিলেক্ট করে দিন।
এই পর্যায়ে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার বিভিন্ন তথ্য যেমন:
- বিভাগ
- জেলা
- উপজেলা
- আর. এম. ও
- সিটি কর্পোরেশন
- ইউনিয়ন
- মৌজা
- ইউনিয়ন ওয়ার্ড
- পোস্ট অফিস
- পোস্ট কোড ইত্যাদি
তথ্য গুলো যথাযথ ভাবে সাবমিট করা হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হোন।
৪র্থ ধাপ: আবেদনপত্র ডাউনলোড
উপরের ৩টি ধাপ পূরণ করা হয়ে গেলে এই পর্যায়ে এসে আরেকবার সব কিছু চেক করে নিন, কেননা সাবমিট অপশনে ক্লিক করলে আর ইডিট করা যাবে না। তাই সব কিছু ঠিক থাকলে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
সাবমিট করা হয়ে গেলে একেবারে প্রথম ড্যাশবোর্ডে চলে আসুন। এবং সেখানে থেকে আবার প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করলে একটি ডাউনলোড বাটন দেখতে পারবেন। এই বাটনে ক্লিক করে পুরো ভোটার আইডি কার্ড আবেদন ফরমটি PDF ফাইলে ডাউনলোড হয়ে যাবে।
পরবর্তীতে এটাকে প্রিন্ট আউট করতে হবে। এবং উপরে উল্লেখ্যিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের সাথে করে নির্বাচন কমিশনের অফিসে জমা দিতে হবে।
মূলত আবেদন করার পর নিদিষ্ট দিনে ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য (যেমন – ফিংগারপ্রিন্ট) দেয়ার জন্য ডাকা হবে। সেই প্রসেস সম্পন্ন করার ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ভোটার আইডি কার্ড রেডি হয়ে যাবে।
চুড়ান্ত মন্তব্য
এই ছিলো ভোটার আইডি কার্ড আবেদন করার সম্পুর্ণ নিয়ম। প্রতিটা নতুন ভোটারকে NID কার্ডের জন্য এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পুরো প্রসেসিংয়ে কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো করবেন না কিংবা দালালের শরণাপন্ন হবেন না। সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক নিয়মে আবেদন করুন, আর NID সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য জানতে Infonur ব্লগটি অনুসরণ করুন, ধন্যবাদ।