বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MSF) এর কথা উঠলেই যার নাম সবার প্রথমে আসবে সেটা হলো Bkash. বাংলাদেশে বিকাশের মত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যেনো আর কোনোটিই নয়। বর্তমান সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানো মানেই হয়ে গেছে “বিকাশ করা” অনলাইনে টাকা পাঠানোর মাধ্যম মানেই বিকাশে টাকা পাঠানো।
সবার মুখে মুখে ও ব্যবহারের শীর্ষে থাকা নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো এই আর্টিকেলটিতে। বিকাশের ইউজার প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং আপনি যদি এমন একজন হয়ে থাকেন যে এখন অব্দি বিকাশে একাউন্ট খুলেননি এখন ঘরে বসে বিকাশে একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। এখানে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেয়া হবে ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম।
বিকাশ একাউন্ট খুলতে যা যা প্রয়োজন
বিকাশ একাউন্ট খোলা শুরু করার আগে জেনে নেয়া উচিৎ বিকাশ একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নিম্মে উল্লেখ্যিত জিনিস গুলো আপনার অবশ্যই থাকা চাই।
- একটি মোবাইল ফোন
- একটি সিম নাম্বার (যে নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট থাকবে)
- বিকাশ অ্যাপ
- ইন্টারনেট সংযোগ
- যার নামে একাউন্ট খোলা হবে তার NID / জন্ম নিবন্ধন পত্র
- স্বয়ং সেই ব্যক্তি (ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য)
ব্যাস, উল্লেখ্যিত জিনিস গুলো আপনার হাতের কাছে থাকলেই কাজ শুরু করে দিতে পারেন। এবার সরাসরি মোবাইলে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মোবাইলে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
মূলত মোবাইল দিয়ে বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খোলার নিয়ম খুব সহজ। এখানে আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। সর্বোমোট ১০ মিনিট সময় ব্যয় করলেই নতুন বিকাশ একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, অ্যাপ ছাড়া বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম আপাতত নেই তাই অবশ্যই শুধুমাত্র বিকাশ অ্যাপ দিয়ে একাউন্ট খোলা যায়। এছাড়া যার জন্য একাউন্ট খোলা হবে তাকে অবশ্যই সাথে থাকতে হবে কিংবা আপনি যদি নিজেই নিজের জন্য বিকাশ একাউন্ট খুলে থাকেন তবে আর কোনো কিছু না ভেবে সামনের প্রসেস গুলো দেখে নিন।
নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই NID কার্ড কিংবা জন্ম নিবন্ধন পত্র থাকতে হবে। কেননা এই দুইটি ভেরিফিকেশন মাধ্যম দ্বারাই আপনার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করা হবে। আপনার কাছে যেটা আছে সেটা দিয়েই বিকাশ একাউন্ট খুলতে নিচের দুইটি প্রসেস এর যেকোনো একটি প্রসেস অনুসরণ করুন।
আরও জানুনঃ বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম।
NID দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশে একাউন্ট খোলার জন্য চিরচেনা যে মাধ্যমটির মধ্য দিয়েই যেতে হয় তা হলো NID ভেরিফিকেশন। মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস গ্রহণ করতে হবে আপনার NID থাকা চাই। যাইহোক, এবার NID দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে ধাপে ধাপে জানাচ্ছি:
১ম ধাপঃ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
প্রথমেই বিকাশ অ্যাপ ইন্সটল করে নিন। এরপর অ্যাপটি ওপেন করুন। স্বাভাবিকভাবেই আপনার কাছ থেকে কিছু পারমিশন চাইবে, দিয়ে দিবেন। পাশাপাশি ড্যাশবোর্ড থেকে “লগিন/রেজিষ্ট্রেশন” বাটনে ক্লিক করুন।
এবার যে নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সে নাম্বারটি দিয়ে “পরবর্তী” অপশনে ক্লিক করুন।
এবার উক্ত নাম্বারটি যে সিমের ছিলো সেই সিম অপারেটর সিলেক্ট করে দিন।
অতঃপর, একটি ভেরিফিকেশন কোড বা OTP আসবে আপনার নাম্বারে সেটা সাবমিট করুন।
২য় ধাপঃ তথ্য ও ফেইস ভেরিফিকেশন
এবার আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে NID কার্ড দিয়ে ভেরিফিকেশন দেখাবো।
NID কার্ড সিলেক্ট করার পর আপনাকে যে কাজ গুলো করতে হবে সেগুলো হলো:
- NID কার্ডের উভয় পাশের ছবি তোলা
- কার্ডের আলোকে অটোমেটিক সাবমিট হওয়া তথ্য চেক করা
- এডিশনাল কিছু তথ্য প্রদান করা
- ফেস ভেরিফিকেশন করা
তথ্যের হালনাগাদ করার পর, ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য মোবাইলের ক্যামেরা অন হবে। এরপর পর্যাপ্ত আলোতে গিয়ে মুখ বরাবর স্ক্রিন রাখবেন। মুখমন্ডল ডান-বাম পাশে ঘুড়ানো ও চোখের পলক ফেলার মাধ্যমে ফেস ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
৩য় ধাপঃ নিরাপত্তা পিন প্রদান
এই সকল কাজ হয়ে গেলে নিচের দেয়া ছবির মত দেখাবে। সব কিছু ভেরিফাই করে কনফার্ম হতে কিছুটা সময় নিবে।
যখন সব কিছু সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন উক্ত একাউন্টের জন্য নতুন পিন সেট করতে বলা হবে। এই পর্যায়ে ৫ ডিজিটের PIN (Personal Identity Number) সিলেক্ট করে দিন।
ব্যাস, আপনার কাজ শেষ। আপনার বিকাশ একাউন্ট খোলা ও ভেরিফাই করা হয়ে গেছে এবার আবার অ্যাপটিতে ঢুকে লগিন করুন, ড্যাশবোর্ড ওপেন হয়ে যাবে।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
এইতো কয়েক মাস আগেই বিকাশ থেকে নতুন একটা নিয়ম চালু হয়েছে যা হলো “এখন থেকে জন্ম নিবন্ধন পত্র দিয়েই খোলা যাবে বিকাশ স্টুডেন্ট একাউন্ট” তাহলে এই পর্যায়ে জেনে নেয়া যাক জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে।
আইডি কার্ড ছাড়া বিকাশ একাউন্ট খোলার শর্ত সমূহ
- যাদের মূলত ন্যাশনাল আইডি কার্ড নেই বিশেষ করে স্টুডেন্টদের জন্যই জন্মনিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার সুযোগ থাকছে।
- যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে তারাই কেবল জন্ম নিবন্ধন পত্র দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবে। ১৮ বছরের বেশি বয়স হয়ে থাকবে অবশ্যই NID দিয়ে খুলতে হবে।
- স্টুডেন্ট যারা কি-না ১৮ বছরের নিচে এবং বিকাশ একাউন্ট খুলতে চায় তাদের অভিবাভকের বিকাশ একাউন্ট নাম্বার প্রয়োজন হবে।
উপরের ধাপে দেখিয়েছি কিভাবে বিকাশ অ্যাপ ইন্সটল করে যে নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট করতে চাচ্ছেন সেটা যুক্ত করে একাউন্ট খোলার কার্যক্রম শুরু করবেন। এখানে তার পর থেকে দেখানো হচ্ছে। নিচের ছবিটি দেখতে বুজতে পারবেন যে এখানে দুইটা অপশন ছিলো NID কার্ড দিয়ে ভেরিফিকেশন অথবা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ভেরিফিকেশন। এবার আমরা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে কিভাবে একাউন্ট খুলবেন সে বিষয়ে দেখাবো।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ৩টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধনের ছবি সাবমিট করতে হবে।
- পিতা / মাতার তথ্য দিতে হবে।
- নিজের ফেস ভেরিফিকেশন করতে হবে।
ধাপ গুলো বিস্তারিত দেখে নেয়া যাক…
প্রথমেই ছবি তুলে জন্ম সনদের তথ্য দিতে হবে যেমন:
- নাম
- জন্ম তারিখ
- জন্ম সনদ নাম্বার
- লিঙ্গ
- আয়ের সোর্স
- মাসিক ইনকাম
- পেশা
সেসব তথ্য দেয়া হয়ে গেলে এবার ২য় ধাপের কাজ শুরু যেখানে মা / বাবার তথ্য দিতে হবে। তবে এখানে যেকোনো একজনের তথ্যই দিতে হবে। আপনার মা কিংবা বাবা যার ই বিকাশ একাউন্ট আছে তার বিকাশ একাউন্ট নাম্বারটি এখানে দিয়ে দিন।
সবশেষে আপনার নিজের ফেস ভেরিফিকেশন করুন। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আলোতে গিয়ে Font Camera ওপেন হলে চেহারা স্ক্যানিং হওয়ার আগ অব্দি অপেক্ষা করুন।
এই পর্যন্ত করা হয়ে গেলে আপনি প্রায় সকল কাজই করে ফেলেছেন একাউন্ট করার জন্য। এবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পিতা মাতার বিকাশ নাম্বার থেকে ভেরিফিকেশন কোড এনে সাবমিট করুন রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করার জন্য।
যেহেতু এটা একটি বিকাশ স্টুডেন্ট একাউন্ট বা under 18 account তাই এই একাউন্ট এর লেনদেন অভিবাভকরা দেখতে পারবে। তাছাড়া পিতা / মাতার নাম ও ঠিকানা সঠিক ভাবে সাবমিট করতে হবে এবং পিতা / মাতাই নমিনি হিসেবে নিযুক্ত থাকবে।
FAQ
বিকাশে একদিনে কত টাকা পাঠানো যায়?
একজন বিকাশ ব্যবহারকারী দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৩,০০,০০০ টাকা বিকাশে লেনদেন করতে পারবেন।
বিকাশ একাউন্ট খুললে কত টাকা বোনাস?
বিকাশ অ্যাপ থেকে একাউন্ট খুলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিন সেট করে প্রথমবার অ্যাপে লগইন করলেই নতুন গ্রাহক ২৫ টাকা ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক পাবেন। একাউন্ট খোলার পর অ্যাপে লগইন করে অ্যাপ থেকে যেকোনো মোবাইল নাম্বারে প্রথমবার রিচার্জ করলেই নতুন গ্রাহক আরো ২৫ টাকা ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক পাবেন। এছাড়া ২ মাস পর্যন্ত মোবাইল রিচার্জ, সেন্ড মানি, পে বিল ও অ্যাড মানি কার্ড টু বিকাশ)-এ ৭৫ টাকা ক্যাশব্যাক।
চুড়ান্ত মন্তব্য
ব্যাস, এই ছিলো পুরো পদ্ধতি নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার। পুরো আর্টিকেল জুরে ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে NID কার্ড এবং জন্ম নিবন্ধন পত্রের মাধ্যমে ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম। নতুন স্টুডেন্ট একাউন্টে ওয়েলকাম অফার হিসেবে রয়েছে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বোনাস। পাশাপাশি বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে আরও জানতে ইনফোনুর এর সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।