আমাদের দেশে খুব মজাদার একটা ব্যাপার হয়, সেটি হলো যতই সঠিক ভাবে তথ্য দেয়া হোক না কেনো, জন্ম নিবন্ধন সনদে কোনো না কোনো ভুল পাওয়াই যায়। যার জন্য পরবর্তীতে আবার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হয়।
তবে আগে এই আবেদন থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা কাউন্সিল অফিসে গিয়ে করতে হতো অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে। তবে এখন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা যায়। এই আর্টিকেলে জানাবো অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম, যাতে করে আর ভোগান্তিতে না থাকতে হয় কোনো ভুলের সংশোধন করতে। চলুন, কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জন্ম নিবন্ধনের সংশোধন কার্যক্রম শুরু করার আগেই গুছিয়ে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো। এই পর্যায়ে কি প্রয়োজনে কি ডকুমেন্টস লাগবে সে বিষয়ে ছক আকারে জানাচ্ছি।
নিজের নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে
১) টিকা কার্ডের কপি (বয়স কম হলে)
২) জাতীয় পরিচয় পত্র
৩) শিক্ষাগত যোজ্ঞতা সনদ (JSC/SSC/সম্মান বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট)
৪) পাসপোর্ট (যদি থাকে)
পিতা-মাতার নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে
১) পিতা মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
২) পিতা মাতার NID Card
৩) নিজের শিক্ষা সনদ
৪) আবেদন জোরদার করতে ভাই-বোনের NID কার্ড/জন্মনিবন্ধনের কপি।
বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে
বিদ্যুৎ অথবা ইউটিলিটি বিলের কপি (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট বিল ইত্যাদি)
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে
১) চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন পত্র
২) স্থায়ী ঠিকানার খাজনা / কর পরিশোধের রশিদ
৩) NID কার্ডের কপি
জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ইংরেজি করার ক্ষেত্রে
১) আবেদনাধীন ব্যক্তির বিদ্যালয়ের ইংরেজি নাম উল্লেখ্য রয়েছে এমন প্রত্যয়ন পত্র
২) NID কার্ডের কপি
৩) পিতা মাতার NID কার্ডের কপি
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফি এর মতও জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি (fee) ও রয়েছে। এটি সরকার দ্বারা নির্ধারিত থাকে। সংশোধনের বিষয়ের উপর নির্ভর করে সরকারি ফি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টা হয়ে থাকে। নিম্মে তালিকা আকারে কোন ক্ষেত্রে কত টাকা ফি তা উল্লেখ্য করা হলো:
সংশোধনের বিষয় | দেশের নাগরিক | বিদেশের নাগরিক |
জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন ফি | ১০০ টাকা | ২ ডলার |
নিবন্ধনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধন ফি | ৫০ টাকা | ১ ডলার |
বাংলায় এবং ইংরেজিতে জন্ম সনদের কপি সংগ্রহ করার ফি | বিনা খরচে | বিনা খরচে |
বাংলায় ও ইংরেজিতে উভয় ভাষায় জন্ম নিবন্ধনের সনদের নকল সংগ্রহ করার ফি | ৫০ টাকা | ১ ডলার |
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধনে যেকোনো সমস্যাই হোক না কেনো সমাধান করতে চলে যেতে হবে এই ওয়েবসাইটে [https://bdris.gov.bd/br/correction] এখানে ড্যাশবোর্ড থেকেই পরবর্তী কাজ গুলো করতে হবে।
প্রথমেই মেনু অপশন থেকে “জন্ম নিবন্ধন” ক্যাটাগরিটি ক্লিক করবেন, সেখানে আরো অনেক গুলো সাব ক্যাটাগরি দেখতে পারবেন যেখান থেকে “জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন” নামক ক্যাটাগরিতে ক্লিক করুন।
এবার আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে বিশদ বিবরণী ও একটি ছোট ফরম যেখানে আপনার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ এর জন্য প্রদান করতে হবে। এখানে বেশ কিছু তথ্য দেয়া থাকবে যা নিজ গুনে পড়ে নিবেন। এখানে মূলত কোন কন্ডিশনে কি করতে হবে সেসব জানিয়েছে।
যাইহোক, আপনি যে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান সেটির নাম্বার টাইপ করে লিখুন। এরপর জন্ম নিবন্ধনে উল্লেখ্য করা জন্ম তারিখ দিন।
সবশেষে একটি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে। ক্যাপচাতে যা দেখানো হবে সেটিই অনুরূপ টাইপ করতে হবে। সবশেষে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করুন।
এবার নতুন একটি পেজ আসবে যেখানে সংশোধনীয় তথ্য গুলো দিতে হবে। এখানে প্রথমেই একটি নির্দেশনা দেয়া আছে যে, একজনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২বার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার সুযোগ পাবে। এরপর আপনি কি ধরণের সংশোধন করতে চান সেটি সিলেক্ট করে দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধনের যা যা সংশোধন করা যাবে, তা হলো:
- জন্ম তারিখ
- পিতা-মাতার কততম সন্তান
- লিঙ্গ
- পিতা ও মাতার নাম (বাংলা এবং ইংরেজি উভয়)
- নামের প্রথম ও শেষের অংশ
- জাতীয়তা
- NID
- ব্যক্তির ছবি
- পাসপোর্ট
- পিতা ও মাতার জাতীয়তা
এরপর আবেদনাধীন ব্যক্তির জন্ম স্থানের ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। যেমন:
- দেশ
- বিভাগ
- ডাকঘর
- গ্রাম/পাড়া/মহল্লা
- বাসা ও সড়ক নাম্বার
মনে রাখতে হবে যে, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই সকল তথ্য সাবমিট করতে হবে। জন্মস্থানের মতই স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানাও একই ভাবে পূরণ করতে হবে।
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, এই ধাপে এসে প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো সাবমিট করতে হবে। উপরে উল্লেখিত তথ্য (জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র) অনুযায়ী যেগুলো সাবমিট করতে হবে তা ফাইল আঁকারে সাবমিট করুন।
সবশেষে আবেদন কে করছে তার তথ্য দিতে হবে। আপনি যদি নিজেই নিজের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে থাকেন তবে “আবেদনাধীন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক” অপশনে নিজ লিখবেন অন্যথায় যে করছে তার তথ্য দিবেন।
এরপর আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার সাবমিট করুন। একটি OTP আসবে যা ভেরিফাই করবেন তা সাবমিট করার মাধ্যমে। অতঃপর, “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এবং এরই সাথে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হবে। এবার ফি প্রদানের পর্ব। এখানে আপনি অপশন পাবেন চালান এর মাধ্যমেও পে করার তবে ভালো হয় যদি অনলাইনেই পে করে দেন।
ব্যাস, এবার ফাইনাল ভাবেই আপনার আবেদন কার্য সম্পন্ন হলো। সাধারণত MFS গুলোর মাধ্যমেই পে করতে পারবেন। কত টাকা পেমেন্ট করবেন সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন জিনিসটি সংশোধন করতে চাচ্ছেন সেটির উপর।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফরম ডাউনলোড
আবেদন করা যখন সম্পন্ন হবে তখন একটি পপআপ এর মাধ্যমে পুরো ফরমটি ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। সেখানে যদিও Print অপশন থাকবে, আপনি সেটা সরাসরি প্রিন্ট আউট করতে পারেন অথবা পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন অবস্থা
আবেদন করার পর আবেদনের অবস্থা যাচাই করার ক্ষেত্রে পুনরায় একই ওয়েবসাইটে আসতে হবে। এক্ষেত্রে এই লিংকে [https://bdris.gov.bd/br/application/status] ক্লিক করে সরাসরি চলে আসতে পারেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন অবস্থা জানার জন্য।
আবেদনের অবস্থা জানতে আপনার প্রয়োজন হবে এপ্লিকেশন আইডি এবং জন্ম তারিখ। এই তথ্য গুলো সাবমিট করে দেখুন বাটনে ক্লিক করলেই আবেদনটির বর্তমান স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানিয়ে দিবে।
চুড়ান্ত মন্তব্য
একেক করে জেনে নেয়া হলো অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করছি আর্টিকেলটির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনে থাকা যেকোনো ভুলের সংশোধন খুব সহজেই করতে সক্ষম হবেন। সবশেষে পরামর্শ থাকবে প্রথমবার জন্ম নিবন্ধন সনদ আবেদন করার সময় তথ্যগুলো সঠিকভাবে প্রদান করবেন, তাহলে পরে সেটি সংশোধন করার ঝামেলা পোহাতে হবেনা।
Leave a comment