বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম গুলোর মধ্যে বিকাশ #১ নাম্বার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে MFS গুলোতে গড়ে দৈনিক ৪ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ও মাসে গড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা লেনদেন হয় আর এই অর্থের অনেকাংশ দখল করে নিয়েছে বিকাশ।
যেখানে এতো এতো টাকার ব্যবসা প্রতিনিয়ত হচ্ছে সেখানে আপনি কেনো যুক্ত হবেন না উক্ত ব্যবসায়ের সাথে? প্রশ্ন হচ্ছে, “কিভাবে হবেন?” উত্তর: এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। হ্যাঁ, বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলে বিকাশের সাথে একত্রে ব্যবসা করতে পারেন।
এই আর্টিকেলটিতে আপনাকে সম্পূর্ণ গাইড করবো কিভাবে বিকাশের সাথে এজেন্ট হিসেবে কাজ করবেন, বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম কি, কত টাকা ইনভেস্টমেন্ট দরকার, কত টাকা লাভ হবে আর কি কি ডকুমেন্টস আপনার প্রয়োজন হবে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো। পাশাপাশি জানাবো বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার আবেদন করার পদ্ধতি সম্পর্কেও। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট কী?
বিকাশ এজেন্টের মানে হলো বিকাশের প্রতিনিধিত্ব করা। যার অর্থ দাঁড়ায় বিকাশের যে কার্যক্রম (গ্রাহককে বিভিন্ন প্রকার সেবা দান, যেমন: ক্যাশ আউট, ক্যাশ ইন, একাউন্ট খুলে দেয়া, মোবাইল রিচার্জ করা ইত্যাদি) রয়েছে সেগুলো করার মাধ্যমে বিকাশের প্রতিনিধিত্ব করা। একজন বিকাশের এজেন্ট এই সেবা গুলো গ্রাহককে দেয়ার মাধ্যমে ব্যবসা করে থাকে বিকাশের সাথে।
আর যে একাউন্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ কাজ পরিচালনা করা হয় সেটাকেই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট বলা হয়। বিকাশ এজেন্ট যেকেউ হতে পারে তবে রয়েছে বেশ কিছু কন্ডিশন ও রুলস যা অবশ্যই মেইন্টেইন করে চলতে হবে। তাছাড়া বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম রয়েছে পৃথক করে। বিকাশ একাউন্ট খোলা আর বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলা এক নয়।
বিকাশ একাউন্ট যেমন একজন ইউজার ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেন এর জন্য খুলে থাকে। অন্যদিকে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য খোলা হয়ে থাকে। এবার জেনে নেয়া যাক বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেই লিগ্যাল কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সঠিক। এখানে আপনার বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে যা নিম্মে উল্লেখ্য করা হলো:
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স
- ব্যবসায়ির ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- টিন সার্টিফিকেট এর ফটোকপি
- আগে কখনও বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়নি এমন নাম্বার
- দোকানের সিল (অপশনাল)
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট পাওয়ার শর্ত সমূহ
আপনি যখন বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে চাইবেন তখন আপনার অবশ্যই উক্ত একাউন্টের শর্ত সমূহ স্মরণে রাখতে হবে। মূলত বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলা বা এজেন্ট হিসেবে বিকাশের সাথে ব্যবসা করার জন্য দুইটা শর্ত সবসময় মেইন্টেইন করতে হয় যা হলো:
(শর্ত নং ১) বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে সবসময় সর্বনিম্ম ৭ হাজার টাকা রাখতেই হবে। এটা প্রথম দিন থেকেই প্রযোজ্য হবে এবং যতদিন ব্যবসা করবেন বিকাশের সাথে ততদিন অব্দি।
(শর্ত নং ২) বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০০০ টাকা লেনদেন করতেই হবে। এটা হতে পারে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ। তবে একটি হোক কিংবা একাধিক সর্বনিম্ম ২ হাজার টাকার লেনদেন প্রতিদিন দেখাতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে?
আসলে বিকাশ এজেন্ট ব্যবসাতে কত টাকা লাগে সেটা স্পেসিফিক করে বলা যায় না, কেননা এটা নির্ভর করবে আপনি কত বড় পরিসরে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেটার উপর।
তবে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, আপনি এখানে টাকা দিয়ে টাকার ব্যবসা করবেন। এক্ষেত্রে আপনার ক্যাশে যত টাকা আছে সমপরিমাণ টাকা কিন্তু একাউন্টেও রাখতে হবে।
এমনটা বলা যায় না যে, একদিনে গ্রাহক কেবল ক্যাশ আউট-ই করলো ক্যাশ ইন করলো না, আবার বিপরীতটাও হতে পারে। তাই সম-পরিমাণ অর্থ অবশ্যই হাতে ও একাউন্টে রাখতে হবে।
তবে প্রথমিক ভাবে এজেন্ট ব্যবসা শুরু করতে ১ লাখ টাকা ব্যালেন্স রিচার্জ করতে হয়। তাছাড়া গ্রাম অঞ্চলে ৫০,০০০ ও শহরে ১ থেকে ২ লাখ টাকা রেগুলার লাগবেই। তবে এটা কখনই নিদিষ্ট নয়।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
আসলে বিকাশের সাথে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম রয়েছে ৩টি। দুইটি অফলাইন ও একটি অনলাইন। এবার সে বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
বিকাশ বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে
আপনি যে এলাকাতেই থাকেন না কেনো, নিশ্চই সেখানে কোনো না কোনো বিকাশ এজেন্ট রয়েছে। এই সকল এজেন্টদের কাছে প্রতিদিন বিকাশের বিক্রয় প্রতিনিধিরা এসে থাকে ব্যালেন্স রিচার্জ করে দেয়ার জন্য। আপনি সরাসরি বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে আলাপ করে তার কাছ থেকেই এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
একালার ডিস্ট্রিবিউটর অফিস থেকে
তাছাড়া আপনার এড়িয়ায় বিকাশের যে ডিস্ট্রিবিউটর অফিস রয়েছে সেখানে গিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে যেগুলো সম্পর্কে পরবর্তী ধাপে জানানো হয়েছে।
অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
আর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো অনলাইনে ঘরে বসে বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদন করা। এক্ষেত্রে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না, প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে আবেদন করবেন। বিকাশের প্রতিনিধিরাই আপনার সাথে যোগাযোগ করে এজেন্ট একাউন্ট এক্টিভ করা সংক্রান্ত কাজ করে দিবে।
অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট একাউন্টের জন্য আবেদন করতে নিচে উল্লেখ্যিত পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন:
ধাপ ১: প্রথমেই বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে থাকা এজেন্ট হওয়ার রেজিস্ট্রেশন ফরমটি পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এখানে ক্লিক করে সরাসরি ফরম পূরণ করতে চলে যান।
ধাপ ২: ফরমে থাকা প্রতিটি তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। প্রথমেই দোকানের নাম, ঠিকানা, যোগাযোগের উপায় গুলো (নাম্বার, ইমেইল) উল্লেখ্য করবেন।
এরপর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি-না সেটা জানাবেন, পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স এর তথ্যও সাবমিট করবেন।
সব লিখা হয়ে গেলে “ক্যাপচা” পূরণ করার পর “জমা দিন” অপশনে ক্লিক করে জমা করে দিবেন। তারা আপনার রিকুয়েস্টটি ভেরিফাই করবে। পরবর্তীতে বিকাশ যদি আপনাকে এজেন্ট হওয়ার উপরযুক্ত মনে করে তবে ডিস্ট্রিবিউটার টিম থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে।
তবে ভালো হয় যদি আপনি নিজে গিয়ে একবার সেখানে যোগাযোগ করেন। এতে করে অপেক্ষার সময় কিছুটা কমবে। এরপর তাদের কাছে আরো বেশ কিছু কাগজপত্র (কি কি প্রয়োজন তা পরবর্তী ধাপে উল্লেখ্য রয়েছে) তাদের কাছে দিবেন।
ধাপ ৩: তারা চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর আপনাকে ট্রেনিং এর জন্য ডাকবে, অতঃপর ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আপনার এজেন্ট সিমটি এক্টিভ করে দিবে ব্যবসা করার জন্য। ব্যাস, এই হলো ওভারল নিয়ম। এবার একেক করে Additional তথ্য গুলো জেনে নেয়া যাক।
বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ে লাভের পরিমাণ কত টাকা?
একহন এজেন্ট ব্যবসায়ী নিজের ইচ্ছা মত লেনদেন করতে পারে। উপরে উল্লেখ্যিত সর্বনিম্ম লেনদেন সীমা বজায় রেখে সর্বোচ্চ যত টাকা ততটাকার লেনদেন করতে পারে। এক্ষেত্রে কত টাকা লাভ হবে সেটা জানার বিষয়।
বিকাশ মূলত প্রতি হাজার টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে ৪.১০ টাকা এজেন্টকে প্রদান করে। এটা হতে পারে ক্যাশ ইন কিংবা ক্যাশ আউট করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই লাভের পরিমাণ সমান থাকবে।
তবে আপনি একই কাজ যখন বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ থেকে করবেন তখন লাভের পরিমাণ ৪.৫০ টাকা হবে প্রতি হাজারে।
তাছাড়া আপনি যদি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট দ্বারা মোবাইল রিচার্জ করিয়ে দেন তবে প্রতি হাজার টাকা মোবাইল রিচার্জ করে দেয়ার জন্য ২৮ টাকা কমিশন পেয়ে যাবেন।
আরেকটি কমিশনের ব্যবস্থা রয়েছে এজেন্ট একাউন্টের জন্য, সেটি হলো আপনি যদি কাউকে বিকাশ একাউন্ট খুলে দেন ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ টাকা আপনার এজেন্ট একাউন্টে যুক্ত হবে সঙ্গে সঙ্গে।
এজেন্ট একাউন্ট দ্বারা লেনদেনের ফলে যত টাকা লাভ হবে সেটি কোনো প্রকার চার্জ ছাড়াই ডিস্ট্রিবিউট অফিসের কর্মকর্তার কাছ থেকে নিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন ১ লক্ষ টাকার লেনদেন করেন তবে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
আরেকটি বিষয়, আপনি অবশ্যই বিকাশ এজেন্ট অ্যাপটি ব্যবহার করে লেনদেন গুলো করবেন এতে করে যেমন লেনদেন করা সহজ হবে তেমনই অতিরিক্ত কমিশন পাবেন (যেমন – *২৪৭# ডায়েল করে লেনদেন করাতে হাজারে ৪.১০ টাকা কমিশন পাবেন, অন্যদিকে এজেন্ট অ্যাপ থেকে করলে ৪.৫০ টাকা হাজারে কমিশন পাবেন)
চুড়ান্ত মন্তব্য
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে এই ছিলো সকল তথ্য। বলে রাখা ভালো যে, অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট একটা সময় খুব দ্রুত দিলেও এখন দিচ্ছে না তাই সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হবে যদি সরাসরি নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। আশা করি পুরো বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে অনুসরণ করুন Infonur ব্লগটি, ধন্যবাদ।
Leave a comment