বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
অনলাইন হোক কিংবা অফলাইন কেনাকাটায় পেমেন্ট মানেই বিকাশ। বিশেষ করে ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠিদের বিকাশের দ্বারা আর্থিক লেনদেনে হয়েছে অনেক সুবিধা। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ ব্যবসায়ীরা বিকাশ মার্চেন্ট এর মাধ্যমে সহজেই কাস্টমারদের সাথে আর্থিক লেনদেন করতে পারছে।
তবে ২০২৪ সালে এসে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলাও হয়ে গেছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আগের মত মিলছে না মার্চেন্ট একাউন্ট। সব কিছু ঠিক থেকেও কোথাও যেনো ঠিক নেই।
আসলে বিষয়টি কি? কেনো পাওয়া যাচ্ছে না মার্চেন্ট একাউন্ট? সে সব কিছু জানাবো এই আর্টিকেলটিতে। পাশাপাশি জানাবো সঠিক ভাবে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। যাতে করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে ও ব্যবহার করতে পারেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ওভারভিউ
শুরুটা বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট সম্পর্কে জানানোর মাধ্যমেই করে ফেলি। বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট হলো ব্যবসায়িক লেনদেনের ডিজিটাল মাধ্যম। এটা এমন এক সার্ভিস যেখানে ক্রেতা বিক্রেতা থেকে পণ্য বা সেবা গ্রহণ করার পর উহার মূল্য মোবাইলের মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে।
অন্য ভাবে বলতে গেলে, একজন ক্রেতা যদি কোনো দোকান থেকে ১০০ টাকার জিনিস ক্রয় করে তবে সরাসরি টাকা না দিয়ে বিকাশ এর মাধ্যমে ওই দোকানিকে ১০০ টাকা পেমেন্ট পাঠিয়ে দিতে পারে। আর যে একাউন্টের মাধ্যমে এই পুরো প্রসেস ঘটবে সেটাই হলো বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট।
সাধারণত ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্টের তুলনায় বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট বেশি ব্যবহার করে থাকে। এই কাজটি করার পেছনে কারণ ও আছে। মূলত ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট থেকে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়, এই কারণেই ব্যবসায়ীদের এরুপ কার্যক্রম।
এবার স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে “তাহলে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা সমূহ কি কি?” পরের ধাপে সে বিষয়েই জানাচ্ছি।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধাসমূহ
#১) প্রথমবার যখন বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা হবে তখন প্রথম তিন মাস সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে ক্যাশ আউট করতে পারবেন। পরবর্তী মাসগুলোতে ক্যাশ আউট করতে নির্ধারিত ক্যাশ আউট চার্জ প্রযোজ্য হবে।
#২) মার্চেন্ট একাউন্ট থাকলে বিকাশের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে অটোমেটিক পেমেন্ট যার দ্বারা কাস্টমার খুব সহজেই অটোমেটিক পেমেন্ট করতে পারবে।
#৩) মার্জেন্ট একাউন্টে থাকছে পেমেন্ট রিফান্ডের সুবিধা অর্থাৎ কোন কাস্টমার যদি পেমেন্ট করে রিফান্ড চায় সেক্ষেত্রে আপনার সম্মতিতে অটোমেটিকলি তার রিফান্ড হয়ে যাবে।
#৪) লেনদেনের ক্ষেত্রে পার্সোনাল একাউন্টে লিমিটেশন থাকলেও মার্চেন্ট একাউন্টে লিমিটেশনের মাত্রা কম যার ফলে অনেক বেশি টাকার লেনদেন প্রতিদিন করা যাবে।
#৫) একই এনআইডি কার্ড তারা পার্সোনাল একাউন্টের পাশাপাশি merchat account খোলা যায়। তবে যদি ওই এনআইডি দ্বারা এজেন্ট কিংবা রিটেইলার একাউন্টে না থাকে সে ক্ষেত্রেই মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা যাবে।
#৬) মার্চেন্ট একাউন্ট দ্বারা কাস্টমার থেকে একাধিক পেমেন্ট অপশন, যেমন: Direct পেমেন্ট, QR কোড পেমেন্ট, পেমেন্ট লিংক, এমনকি ভিসা কার্ড থেকেও পেমেন্ট গ্রহণ করার সুবিধা থাকছে।
#৭) পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে কোন লিমিটেশন নেই অর্থাৎ কাস্টমার চাইলে এক টাকাও পেমেন্ট পাঠাতে পারবে এমনকি উক্ত পেমেন্ট তুলনামূলক কম খরচে উত্তোলন করা যায়।
#৮) বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর জন্য পৃথক মোবাইল অ্যাপ রয়েছে তাছাড়া *২৪৭# ডায়াল করার মাধ্যমেও মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যায়।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট করতে যা যা লাগে
সুবিধা সম্পর্কে তো জান না এই পর্যায়ে জেনে নিবো বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন সে বিষয়:
- আবেদনকারীর বয়স সর্বনিম্ন ১৮ এবং বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
- নিজের নামে নিবন্ধিত বৈধ মোবাইল নাম্বার, যেটা পূর্বে কোন বিকাশ একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি।
- আবেদনকারীর ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- টিন (TIN) সার্টিফিকেট।
- ট্রেড লাইসেন্সের কপি। (মেয়াদসহ)
- ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস) এর কপি।
- ব্যাংক বিবরণী। (একাউন্ট নাম, নাম্বার, বাংকের নাম, ব্যাংক শাখার নাম)
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড/ড্রাইভিং লাইসেন্স/পাসপোর্ট/অনলাইন এনআইডি প্রিন্ট কপি।
- সার্টিফিকেট অফ ইনকর্পোরেশন (লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে) এবং মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশান (লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে) তাছাড়া পার্টনারশিপ সমর্থনপত্র (পার্টনারশিপ ফার্মের ক্ষেত্রে)
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
এবার জানাবো বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। উক্ত কাজটি করতে প্রথমেই যেকোনো ব্রাউজার থেকে চলে যেতে হবে Bkash এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। অথবা সরাসরি এখানে ক্লিক করে চলে যেতে পারেন কাঙ্খিত পেজটিতে।
এবার সেখানে একটি ফরম দেখতে পারবেন যা আপনাকে পূরণ করার মাধ্যমেই মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার প্রথম ধাপ অতিক্রম করতে হবে। নিচে ফরমটির ছবি ও কোথায় কি জমা দিবেন সে বিষয়ে জানাচ্ছি।
#ধাপ ১) এখানে প্রথমেই আপনার মার্চেন্ট / দোকানের নাম দিয়ে দিবেন। দোকানের লোকেশন তথা জেলা ও এলাকা সিলেক্ট করে দিবেন।
#ধাপ ২) যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল দিন। পাশাপাশি অন্য কোনো পরিচয় (যা আপনাকে খুজে পেতে সহায়ক হবে) চাইলে দিয়ে দিতে পারেন।
#ধাপ ৩) এবার আপনার কি জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি-না সে বিষয়ে জানাবেন। বলে রাখা ভালো যে, মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে আপনার অবশ্যই NID থাকতে হবে।
#ধাপ ৪) পাশাপাশি “ট্রেড লাইসেন্স” আচে কি-না সেটা জানানোর পর থাকলে ট্রেড লাইসেন্স এর নাম্বার ও মেয়াদ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে “জমা দিন” অপশনে ক্লিক করুন।
ব্যাস, আবেদন সংক্রান্ত কাজ শেষ। এবার অপেক্ষা করুন কেননা তাদের প্রতিনিধি নিজে থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে এই বিষয়ে নেক্সট ধাপে যাওয়ার জন্য।
তারা যখন আপনার কাছে আসবে তখন আপনাকে আরো বেশ কিছু তথ্য ও ডকুমেন্টস তাদের দিতে হবে যে বিষয়ে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে।
Additional Information
তবে, এটাতো ছিলো ফরম্যাল দিকনির্দেশনা। প্রকৃত বিষয় এই যে, ইদানীং তাদের কাছে অনেক আবেদন জমা হলেও তারা রেস্পন্ডস করছে না। আর এর পিছনে দায়ী বিকাশ না হলেও বিকাশের সাথে যুক্ত স্থানীয় ডিস্টিবিউটাররা।
এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হবে নিজে থেকে এলাকার “বিকাশ এজেন্ট” এর সাথে যোগাযোগ করে উক্ত বিষয়ে জানান দেয়ার মাধ্যমে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার কার্যক্রম করা।
অথবা সরাসরি “বিকাশ কাস্টমার কেয়ার” এ সকল ডকুমেন্টস নিয়ে গিয়ে জমা ও পরবর্তী প্রসেস অনুসরণ করা। পরবর্তী প্রসেস খুব জটিল কিছু নয় তারা নিজে থেকেই করে দিবে। ১ বছর আগেও বিকাশ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে মার্চেন্ট একাউন্ট খুলে ব্যবহার করা গেলেও বর্তমানে এতো সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি এডিশনাল এই তথ্যটি আপনার জন্য কল্যাণকর হবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ক্যাশ আউট চার্জ কত?
একাউন্ট খোলার পর প্রথম ৩ মাস ক্যাশআউট চার্জ ফ্রী। এরপর থেকে স্বাভাবিক ভাবে ক্যাশ আউট চার্জ ১.৭০% টাকা চার্জ করা হয়। তবে আপনি যদি নিদিষ্ট এজেন্ট পয়েন্ট (প্রিয় এজেন্ট) ও এটিএম বুথ থেকে টাকা ক্যাশআউট করেন সেক্ষেত্রে চার্জ হবে ১.৪৯% টাকা।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর লিমিট কত?
- গ্রাহক পেমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি পেমেন্ট লিমিট ৩০,০০০ টাকা এবং মাসিক লেনদেন লিমিট ৫০০,০০০ টাকা।
- মার্চেন্ট টু মার্চেন্ট এর ক্ষেত্রে প্রতি লেনদেন লিমিট ৩০,০০০ টাকা ও মাসিক ৪৫০,০০০ টাকা।
- মার্চেন্ট থেকে গ্রাহক (সেন্ড মানি) এর ক্ষেত্রে প্রতি লেনদেন লিমিট ১০,০০০ টাকা ও মাসে ১০০,০০০ টাকা।
- মার্চেন্ট থেকে এজেন্ট / এটিএম এর ক্ষেত্রে প্রতি লেনদেনে ২০,০০০ টাকা ও মাসে ৩০০,০০০ টাকা।
চুড়ান্ত মন্তব্য
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা নিয়ে যে ঘোলাশা রয়েছে সেটিও জানিয়েছি এই আর্টিকেলটিতে। আশা করছি সঠিক তথ্যের দ্বারা আপনার একাউন্ট খোলার জার্নিটা স্মুথ হবে। বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানতে চোখ রাখুন ইনফোনুর ডটকম-এ, ধন্যবাদ।